আয়নাঘরের বিভিন্ন ভার্সন দেশজুড়ে রয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা
শুধু ঢাকাতে নয়, আয়নাঘরের মতো টর্চার সেলের বিভিন্ন ভার্সন দেশজুড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় তিনটি স্থান পরিদর্শন করেন সরকারপ্রধান। সেই নির্যাতন থেকে বেঁচে ফিরে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগী আর সাংবাদিকরা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের অধ্যাপক ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, “বীভৎস দৃশ্য। নৃশংস জিনিস হয়েছে এখানে।’ তিনি বলেন, ‘যতটাই শুনি মনে হয়, অবিশ্বাস্য, এটা কি আমাদেরই জগৎ, আমাদের সমাজ? যাঁরা নিগৃহীত হয়েছেন, তাঁরাও আমাদের সমাজেই আছেন। তাঁদের মুখ থেকে শুনলাম। কী হয়েছে, কোনো ব্যাখ্যা নেই।”

তিনি বলেন, “ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের বিনা কারণে, বিনা দোষে উঠিয়ে আনা হতো। সন্ত্রাসী বা জঙ্গি বলে এখানে ঢুকিয়ে রাখা হতো। তিনি বলেন, ‘এই রকম টর্চার সেল (নির্যাতনকেন্দ্র) সারা দেশে আছে। ধারণা ছিল, এখানে কয়েকটা আছে। এখন শুনছি বিভিন্ন ভার্সনে (সংস্করণে) দেশজুড়ে আছে। সংখ্যাও নিরূপণ করা যায়নি।”
আয়নাঘরের সংখ্যার বিষয়ে তিনি বলেন, “কেউ বলে ৭০০, কেউ বলে ৮০০। সংখ্যা নিরূপণ করা যায়নি, যে কতটা আছে। কতটা জানা আছে, কতটা অজানা রয়ে গেছে। গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগের নমুনা সৃষ্টি করে গেছে সর্বক্ষেত্রে। এটা তার একটা নমুনা। যারা এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের সবার বিচার করা হবে।”

এ সময় তিনি গুম সম্পর্কিত তদন্ত কমিশনকে ধন্যবাদ দেন সঠিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করার জন্য। তিনি জানান, মানুষের সামান্যতম অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। জাতির জন্য যা চূড়ান্ত রকমের ডকুমেন্ট হবে। সাড়ে ১৭০০ প্লাস এমন ভূক্তভোগি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অজানা কতজন রয়েছে তার ঠিক নেই। কিছু মানুষ উধাও হয়ে গেছে।”

গুমের শিকার বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ক্ষতিপূরণের হিসাব আমরা দেখিনি। আমার দেখছি তার ন্যায়বিচারটা যাতে হয়। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা থেকে সে যেন মুক্তি পায়। তারপর দেখা যাবে কী করা যেতে পারে।”

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস থেকে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টাকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের একটি নির্যাতনকেন্দ্রে ব্যবহৃত একটি বৈদ্যুতিক চেয়ার দেখানো হয়। একজন গুমের শিকার ব্যক্তি কচুক্ষেত এলাকায় প্রধান উপদেষ্টাকে নির্যাতন সেলের দেয়াল দেখান।

প্রধান উপদেষ্টা গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনের সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গত ২৭ অগাস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ১৪ ডিসেম্বর কমিশন অন্তর্বর্তী একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়। পরদিন এ প্রতিবেদনের কিছু অংশ প্রকাশও করা হয়।