অবিশ্বাস্য নাটকীয়তার ফাইনালে সুপার ওভারে হারলো বাংলাদেশ ‘এ’, পাকিস্তান শাহীনস চ্যাম্পিয়ন

উত্তেজনা, নাটকীয়তা, রোমাঞ্চ, নখ কামড়ানো একেকটি মুহুর্ত, একেকটি বল। হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম। পেণ্ডুলামের মতো ঝুলতে থাকা ফাইনাল ম্যাচে কখনো পাকিস্তান শাহীনসের মুখে হাসি। আবার কখনো হাসে বাংলাদেশ ‘এ’। সব সীমা অতিক্রম করে, চরম নাটকীয়তা শেষে ইতিহাসের পাতায় পাকিস্তান শাহীনস। দোহায় এশিয়া কাপ রাইর্জিং স্টারসের ফাইনাল ম্যাচ। নির্ধারিত ২০ ওভারের ম্যাচে কেউ কাউকে হারাতে পারে না। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানে পাকিস্তান শাহীনস কাছে ম্যাচ হেরে শিরোপা হারিয়েছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। মূল ম্যাচে পাকিস্তান শাহীনস আগে ব্যাটিং করতে নেমে ১২৫ রানে গুটিয়ে যায়। জবাব দিতে নেমে ৯৬ রানে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল। ম্যাচ তখন পাকিস্তান শাহীনসের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু দশম উইকেটে সাকলায়েন আহমেদ ও রিপন মণ্ডল সব এলোমেলো করে দেন। রুদ্ধশ্বাস ব্যাটিংয়ে ২৯ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ নিয়ে যান সুপার ওভারে। যদিও তারা শেষ ওভারে জয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৭ রান লাগত বাংলাদেশ ‘এ’-র। প্রথম বলেই রিপন ডাবলস নিলে ম্যাচ নেক টু নেক চলে আসে। পরের দুই বলে দুই ব্যাটসম্যান ২ রান নেন। চতুর্থ বলে গড়বড় করেন রিপন। পেসার আহমেদ ডানিয়েলের স্লোয়ার বাউন্সারে কোনো রান নিতে পারেননি। তাতে চাপ বেড়ে যায়। পরের ২ বলে কোনো বাউন্ডারি না পাওয়ায় ১ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয়।
সুপার ওভারেও ব্যাটিং ছিল তালগোল পাকানো। প্রথমে সাকলায়েন ও পরে জিসান আলম আউট হলে বাংলাদেশ ৩ বলেই গুটিয়ে যায়। অথচ হাবিবুর প্রথম বলে ১ রান নেওয়ার পর একটি ওয়াইড ও বাই চারে বাংলাদেশ ২ বলে ৬ রান পেয়ে যায়। তৃতীয় বলেই জিসান আউট হলে বাংলাদেশ ‘এ’-র শিরোপার স্বপ্নও শেষ হয়ে যায়। সাদ মাসুদের বাউন্ডারিতে ২ বল আগেই পাকিস্তান শাহীনস জিতে নেয় সুপার ওভার।
নাম বদলে শুধু ‘ইমার্জিং’ থেকে ‘রাইজিং স্টারস’ হয়েছে। বাকিটা ঠিকই আছে, এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য ২০১৯ সালে রানার্সআপ হওয়া। সেটাও ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কাছে হেরে। ৬ বছর পর সেই একই তিক্ততার মুখোমুখি বাংলাদেশ ‘এ’। পাকিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করা দল পাকিস্তান শাহীনস (আদতে ‘এ’ দল) ফাইনালে হৃদয় ভাঙে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের। প্রতিযোগিতার সাত আসরে দ্বিতীয়বার রানার্সআপ বাংলাদেশ ‘এ’। তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তান শাহীনস চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া শ্রীলঙ্কা জিতেছে দুইবার। ভারত ও আফগানিস্তান জিতেছে একবার করে। রোববার দোহায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে শিরোপা জয়ের দারুণ সুযোগ ছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দলের। কিন্তু ব্যাটিংয়ে চরম ব্যর্থ হয়ে ম্যাচটা স্রেফ উপহার দিয়ে আসেন আকবর আলীরা। টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে পাকিস্তান শাহীনসকে অল্পরানে আটকে রাখার পরিকল্পনা করেছিল দল। নিজেদের বোলিং পরিকল্পনায় তারা পুরোপুরি সফল। দারুণ বোলিং, দুর্দান্ত ফিল্ডিং এবং মাঠে চনমনে থাকা দল পাকিস্তান শাহীনসকে এক মুহূর্তের জন্য থিতু হতে দেয়নি। রান আউটে শুরু হয় আক্রমণ। রান আউটেই শেষ। বাকি ৮ উইকেটের ৩টি নেন রিপন মণ্ডল। ২টি পেয়েছেন রাকিবুল হাসান। এছাড়া ১টি করে উইকেট পেয়েছেন মেহরব, জিসান ও সাকলায়েন। পাকিস্তান শাহীনসের সাত ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেননি। শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে তারা। দলকে উদ্ধার করেন সাতে নামা সাদ মাসুদ। ২৬ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন তিনি। এছাড়া আরাফাত মিনহাস ২৫ ও মাস সাদাকাত ২৩ রান করে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন। জবাবে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের শুরুটা খারাপ ছিল না। জিসান আলমকে এক পাশে রেখে হাবিবুর রহমান সোহান আক্রমণ করে দলের রান এগিয়ে নেন। ২.৩ ওভারে রান ২২। ওই সময়ে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ ‘এ’। এক ছক্কা মেরে জিসান আউট হন। সঙ্গী হারানোর পর হাল ছাড়েননি হাবিবুর। আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাটিং করে এগিয়ে যান।
কিন্তু ভুল এক শটেই সব শেষ! হাবিবুর শুধু নিজের বিপদই ডেকে আনেননি, ম্যাচের এপিটাফ লিখে দেন। ১৭ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৬ রান করে হাবিবুর আউট হন সাদ মাসুদের বলে। এরপর দলের পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেননি। ৩৬ থেকে দলীয় রান ৫৩ রানে যেতে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ ‘এ’। জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে প্রথমবার ডাক পাওয়ার দিনে মাহিদুল অঙ্কন রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শূন্য রানে আউট হন। ইয়াসির কাভারে ক্যাচ দেন ৮ রানে। আকবর (২), রাব্বী (৩) ও মৃতু্যঞ্জয় (০) ক্রিজে গিয়েছেন আর ফিরেছেন। এই ৩টি উইকেট নেন সুফিয়ান মুকিম। চায়নাম্যানের গুগলি বুঝতেই পারেননি তারা। ৫৩ রানে বাংলাদেশ ‘এ’-র ৭ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। সেখান থেকে লড়াই শুরু করেন রাকিবুল ও মেহরব। ধ্বংসস্তুপ থেকে দলকে টেনে তোলেন। রাকিবুল দুটি চার ও একটি ছক্কায় জবাব দেন। মেহরব হাঁকান একটি চার। তাদের ২৬ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ ‘এ’। ৩৬ বলে ৪৭ রান প্রয়োজন বাংলাদেশ ‘এ’ দলের। সেখানে শাহীদ আজিজকে প্রথম বলেই ছক্কা উড়ান মেহরব। তাতে ড্রেসিংরুমে ফেরে প্রাণ। এরপর সিঙ্গেল-ডাবলসে লক্ষ্য আরো কাছাকাছি আসতে শুরু করে। কিন্তু বড় শট খেলতে গিয়েই বিপদে পড়েন মেহরব। পেসার আহমেদ ডানিয়েলের শর্ট বল উড়াতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ২১ বলে ১৯ রান করেন তিনি। তখনও জয় বেশি দূরে ছিল না বাংলাদেশের। ২৭ বলে লাগত ৩৬ রান। কিন্তু হাতে উইকেট কেবল ২টি। এক ওভারের বিরতিতে দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ রান করা রাকিবুল এলবিডব্লিউ হন। তবুও হাল ছাড়েন না সাকলায়েন ও রিপন। সাকলায়েন ১৯তম ওভারে আজিজকে দুটি ছক্কা ও রিপনকে এক ছক্কা মারেন। তাতে সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ৭ রান। কিন্তু শেষ ওভারে ১ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয় তাদেরকে। এরপর সুপার ওভারেও। ফাইনাল ম্যাচটা হেরে শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার যন্ত্রণা নিয়েই এখন দেশে ফিরতে হবে তাদের।